শিক্ষার্থীদের প্রতি যেকোনো ধরণের আনফেয়ার গ্রেডিং (অনৈতিক মূল্যায়ন) রোধে পদক্ষেপ নিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রশাসন। গতকাল সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে জারি করা নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বিধিমালা এর অনুচ্ছেদ ৭(বি) অনুযায়ী ইন্টারনাল এসেসমেন্ট রিপোর্ট শিরোনামে উল্লেখ রয়েছে ‘ইন্টারনাল এসেসমেন্টের নম্বর প্রতি সেমিস্টারের আগে অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে ‘ – বিষয়টি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলকে মেনে চলার অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি কোর্সে ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন হয়। ৬ মাসের এক একটি সেমিস্টারে এরকম ৪ থেকে ৬ টি করে কোর্স থাকে। প্রতিটি কোর্সের নির্ধারিত শিক্ষক (কোর্স টিচার) ইন্টারনাল এসেসমেন্টে (অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন) ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বরের মূল্যায়ন করেন।সেখানে মিডটার্ম পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট, এটেনডেন্স, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি নিয়ে থাকেন তিনি। আর বাকি ৬০ নম্বরের জন্য চূড়ান্ত লিখিত পরীক্ষা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের।ইন্টারনাল এসেসমেন্টে শিক্ষকরা পক্ষপাতী আচরণ করে বলেই ঘুরেফিরে অভিযোগ।
অপছন্দের শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে ইন্টারনাল এসেসমেন্টে কম নম্বর দেয়া হয় বলে জানা গেছে। বিধিতে থাকলেও অনেক শিক্ষকই সেমিস্টার পরীক্ষার আগে ইন্টারনাল এসেসমেন্টের নম্বর প্রকাশ করেন না। অন্যদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষার খাতা একাধিক এক্সটার্নাল (বহিঃস্থ মূল্যায়ক) মূল্যায়ন করে বলে সেখানে আনফেয়ার গ্রেডিং এর সম্ভাবনা ক্ষীণ।
গত ৩০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী তার বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধরণের একটি অভিযোগ করে। তারপর অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষই সমঝোতায় বসে বিষয়টি সমাধান হয়েছে বলে দাবি করে। তবে সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন সময়ে আনফেয়ার গ্রেডিং এর শিকার শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হওয়া শুরু করেছে।
এমন আনফেয়ার গ্রেডিং নিয়ে সেসময় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সোচ্চার হয়েছিল শিক্ষকরাও। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সবুজ সেমিস্টারের আগে ইনকোর্সের নম্বর প্রকাশ ও নম্বরপত্র প্রদর্শনের সুপারিশ করে বলেন,ছাত্ররা মূলত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার অনুযোগ করে ইনকোর্সে প্রাপ্ত নম্বর প্রত্যাশানুযায়ী না হওয়ায়।আমি মনে করি এসাইনমেন্ট, মিডটার্ম, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি পরীক্ষার খাতা নম্বর দেবার পর শিক্ষার্থীদের দেখতে দেবার সুযোগ করলে আনফেয়ার গ্রেডিংয়ের সম্ভাবনা কমে যাবে।
এদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে জারি করা নোটিশ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র পরামর্শ কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ড. তারেক মাহমুদ আবীর বলেন, গণমাধ্যমে আনফেয়ার গ্রেডিং সংক্রান্ত সংবাদ দেখে আমি বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী আনফেয়ার গ্রেডিং এর কোনো সুযোগ নেই।উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে বিগত দিনের চেয়ে আরো বেশি সজাগ থাকবে।