১৯৪৮ সালের ১লা আগস্ট ঠাকুরগাঁও জেলার এক বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনেই মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। নিজেকে পরিণত করেন এক তুখোড় ছাত্র নেতা। ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। ভূমিকা রাখেন মুক্তিযুদ্ধেও। ১৯৭২ সাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগে। পরে সরকারের পরিদর্শন ও আয়-ব্যয় পরীক্ষণ অধিদপ্তরে একজন অডিটর হিসেবে কাজ করেন।
কিন্তু নিয়তি যেন তাকে ঘুরে ফিরে রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তেই রেখেছিল। জিয়াউর রহমান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এসএ বারী এটি। তার ব্যক্তিগত সচিব পদে মির্জা আলমগীর দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর এসএ বারী উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলে শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যান মির্জা আলমগীর। এবার নিজ শহর ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক পদে। কিন্তু ঠাকুরগাঁও ফিরেই যেন তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির মূলস্রোতে। ১৬ বছরের শিক্ষকতা পেশা থেকে অব্যাহতি নিয়ে ১৯৮৬ সালে অংশ নেন ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে।
জীবনের প্রথম নির্বাচনেই বিজয়ী হন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি সভাপতি মনোনীত হন। এটা অস্বীকারের জো নেই, রাজনীতিতে রয়েছে তার একটা ক্লিন ইমেজ। ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন এমপি।কেবল এমপিই নন দায়িত্ব পান কৃষি প্রতিমন্ত্রী ও পরে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী। চারদলীয় জোট সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মির্জা আলমগীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই।
মূলত ভালো ইমেজের কারণেই তেমন প্রভাবশালী না হয়েও দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে মনোনীত হন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। যে মনোনয়ন ছিল দলের আগামী দিনের মহাসচিব হিসেবে প্রস্তুতির অংশ। দলের তৎকালীন মহাসচিবের মৃত্যুতে অল্প সময়ের মধ্যেই ২০১১ সালের ২০শে মার্চ তিনি দায়িত্ব পান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের। তারপর দীর্ঘ ৫ বছর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে পালন করেছেন মহাসচিবের দায়িত্ব। এ সময়ে তাকে আসামি করা হয়েছে ৮৬টি মামলায়। ৭ দফায় কারাভোগ করেছেন এক বছরের কাছাকাছি সময়। যেতে হয়েছে রিমান্ডেও।
এসব ত্যাগ স্বীকারের পুরস্কার অবশ্য পেয়েছেন তিনি।নানা বিপত্তি সত্ত্বেও এ বছর বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে দলের মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেছেন।
কালিমামুক্ত রাজনীতিবিদদের মধ্যে তিনি একজন।যাকে ছোঁয়তে পারে নি কোন অন্যায়,অনিয়ম,দুর্নীতি-লুটপাটের কলঙ্কের দাগ। মহান নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমীর স্যারের ন্যায় ও সততার জন্য, তাঁকে হাজারও স্যালুট। প্রিয় নেতার সুস্থতা ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।
লেখক:
মো: রাসেল সরকার
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।