স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের অপকর্ম নিয়ে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিম। সেই সংবাদের জেরে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলাও হয়েছিল।
রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জে বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর এর সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম মারা গেছেন।
স্থানীয় সেই চেয়ারম্যান বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের। তার নাম মাহমুদুল আলম বাবু। এই বাবু উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
গতকাল ১৪ জুন দিবাগত রাত অনুমান পৌনে ৯ টার সময় বকশীগঞ্জ টিএন্ডটি রোডে তিনি হামলার শিকার হন। তার ডাক চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় তিনি নিজ দোকান থেকে বাড়ী ফিরছিলেন। মারত্বক আহত নাদিম ১৫ জুন ময়মনসিংহ হাসপালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাম রব্বানী নাদিমের ভাই সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন।
বুধবার রাত ১০টার দিকে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনে ঘটে যাওয়া ওই নৃশংস হামলার বর্ণনা দেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু।
তিনি বলেন, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নাদিমসহ আমরা কয়েকজন নিউজ করেছিলাম,তারপর থেকেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন আমাদের ওপর। পরে আমাদের নামে ডিজিটাল আইনে মামলাও করেন তিনি। সেই মামলা গতকাল ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। এর দুই তিন ঘণ্টা পর রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়।
তিনি আরও বলেন, নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর লোকজন। ঘটনার সময় ওই গলিতে অন্ধকারে আড়ালে দাঁড়িয়েছিলেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু। সেসময় তার ছেলে ফয়সাল, রিফাত,রেজাউল,মনির,সাইদসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। মারধরের সময় আমি আটকাতে গেলে আমাকেও তারা মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী চলে যায়। পরে নাদিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম তার (গোলাম রাব্বানী) ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই হামলা করে তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা জানান, ন্যাক্কার জনক এই ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান চলমান আছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, নিহত সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের পাঁচটি দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। ওই সাংবাদিকের স্বজনেরা ব্যস্ত থাকায় এখনো থানায় মামলা হয়নি।