amadermuktokantho
চট্টগ্রামমঙ্গলবার , ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

তারুণ্যের ভাবনায় মাতৃভাষা দিবস

সিফাত রাব্বানী
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩ ৬:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পৃথিবীতে ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা পঞ্চম বৃহত্তম মাতৃভাষা। এর অবস্থান আরো পরে ছিল কিন্তু প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষায় কথা বলে এমন লোকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ক্রমাগত। পৃথিবীর তিন শতাংশ মানুষের মুখের শ্রুতিমধুর ভাষা বাংলাকে বিশ্বে আরো মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের করণীয় কি সেই বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরেছেন সিফাত রাব্বানী।

বদলে গেছে একুশের ভাষা

সানজিদা ইসলাম
পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

“অমর একুশে ফেব্রুয়ারি”এই বাক্যটি উচ্চারণ করলেই আমরা ফিরে যাই সেই ১৯৫২ সালের রক্তঝরা সেই দিনগুলোতে,অনুভব করি সেই সব বীর যোদ্ধাদের উপর এক অন্যরকম শ্রদ্ধাবোধ। তাদের রক্তের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি প্রিয় বাংলা ভাষা।কিন্তু আমরা কি সত্যিই পেরেছি তাদের সেই জীবন দিয়ে জয় করা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে? বর্তমানে বাংলা ভাষার ভুল ব্যাবহার, শব্দের বিকৃতি, সঠিক ভাবে বাংলায় কথা বলতে না পারা,ভাষা সম্পর্কে নুন্যতম জ্ঞান না থাকা কি প্রশ্নবিদ্ধ করেনা আমাদের মাতৃভাষা কে? বর্তমান প্রজন্মের শতকরা ৭০% মানুষ শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেনা,তারা ইংরেজি শব্দকে বাংলা ভাষার মত করে ব্যাবহার করছে প্রতিনিয়ত, নতুন প্রজন্মের সন্তানকে বাবা মায়েরা বাংলা ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষা তে বেশি আগ্রহী করে তুলছে, বাংলা ভাষা এবং বাংলা সাহিত্যের বই সমুহের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে, দেশের বাইরে আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে পরিপূর্ণ ভাবে তুলে ধরতে ব্যার্থ হচ্ছি।তাই সবকিছু বিবেচনায় আমি মনে করি, সর্বসাধারণের মাঝে বাংলা ভাষা নিয়ে সচেতনতা ও আগ্রহ তৈরী করা এবং বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করা কে অমর একুশের মূল লক্ষ্য রেখে আমাদের তরুণ প্রজন্মের নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।

বাংলা ভাষার বিকাশে বাংলা ফন্টকে গুরুত্ব দিতে হবে

মো. মেহেদি হাসান মাসুক
ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ঢাকা কলেজ।

বাংলা অক্ষরের নকশা করেছিলেন চালর্স উইংকিলস। আধুনিক বিশ্বে ভাষাকে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে ফন্ট। কেনো ইংরেজি বিশ্বে এত দ্রুত ছড়িয়ে গেলো? দেখবেন লক্ষাধিক ইংরেজি ফন্ট রয়েছে। সেই তুলনায় বাংলা ভাষায় কতটি ফন্ট রয়েছে? এর সংখ্যা খুবই নগন্য। অবাঙালি হওয়া স্বত্ত্বেও জ্যাকব টমাস, ফিওনা রোজ, জ্যোতিষ সানোয়াল এর মত বিদেশীরা সবচেয়ে নিখুঁত বাংলা ফন্ট নির্মান করেছেন।২০১৮ সাল পরবর্তীতে বাংলা ফন্টের সোনালী যুগের শুরু হয়েছে বলে মনে করি। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও নির্মাতার আবির্ভাব ঘটে, যারা নিরলসভাবে ফ্রীতে সান্স,স্টাইলিস বাংলা ফন্ট উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই এখন বাংলাফন্ট চিনেন ২০১৮ সালের পর থেকে। তবুও যারা ফন্ট নির্মাণ করেন আমরা তাদের চিনিনা জানিনা। সরকারের উচিত ভাষার বিকাশের জন্য যারা ফন্ট বানাচ্ছেন তাদের সার্বিক ভাবে সহায়তা করা। এই ইউনিকোডের যুগে এসেও আমাদের মন্ত্রী মুস্তফা জব্বার বলেছেন ইউনিকোড বা অভ্র তে লিখা যায় এমন ফন্টে কোন বৈচিত্র নেই। বাস্তবে আন্সি ফন্টের মাধ্যমেই কাজ করা খুব কষ্ট। সরকারি দপ্তরগুলোতেই ইউনিকোডের প্রচলন বাড়াতে হবে। কাজেই আমাদের বাংলাকে সার্বজনীন করতে হলে বাংলা ফন্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। আরো বেশি ডেভেলপার ও ডিজাইনার গড়ে তুলতে হবে। তবেই বাংলা বিশ্বের দরবারে মাথা উচু দাড়াতে পারবে।

গবেষণাপত্র লিখা ও প্রকাশিত হোক বাংলা ভাষায়
মুক্তা আক্তার চাঁদনী
ইংরেজি ভাষা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুসারে, গবেষণাপত্র হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির জন্য লিখিত দীর্ঘ প্রবন্ধ।গবেষণাপত্র লেখার পরিধি, দৈর্ঘ্য ও প্রকৃতি ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু এটি লেখার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য একই থাকে।উচ্চশিক্ষায় গবেষণাপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।একে অনেকে থেসিস পেপার আবার অনেকেই রিসার্চ পেপার বলে সংজ্ঞায়িত করে থাকে।ভাবতে অবাক লাগে, ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পরও দেশের উচ্চশিক্ষাঙ্গনসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে সেই ইংরেজিপ্রীতি মনোভাব নিয়েই আমরা এখনো বাস করছি। এখনো এ দেশে বিদ্যা, বুদ্ধি এবং কর্মকুশলতার মাপকাঠি দাঁড়িয়ে রয়েছে ইংরেজি বলা বা লেখার কৃতিত্বে।শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য গবেষণার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। অথচ বিদেশের মতো এদেশেও প্লেগারিজম (Plagarism) তথা চৌর্যবৃত্তি চলছে। এর কারণ হলো গবেষণাপত্রে ইংরেজির আধিক্য।অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই ইংরেজিতে গবেষণাপত্র তৈরি করা ভীতিকর, সময়সাপেক্ষ মনে হয়। যার ফলশ্রুতিতে তারা এই অবৈধ পথ বেছে নেয়। অথচ,মাতৃভাষায় গবেষণাপত্র তৈরি করার সুযোগ দেয়া হলে শিক্ষার্থীদের এই পথ বেছে নেওয়া লাগতো না।তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উচ্চশিক্ষায় গবেষণার যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তার সঠিক বাস্তবায়নই পারে বাংলা ভাষাকে তার যোগ্য স্থানে নিয়ে যেতে।

কিবোর্ডে বিতর্ক নয়, বাংলা ভাষা হোক উন্মুক্ত
রাহুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতিই একমাত্র ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। রক্ত দিয়ে কেনা আমার মায়ের ভাষা বাংলা। আহা! কত মধু এই ভাষায়।মনের ভাব প্রকাশের সবচয়ে সুন্দর বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই বাংলায়।লিখতে,পড়তে কতটা সাবলীল আমার মাতৃভাষা।বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম হাতিয়ার আধুনিক প্রযুক্তি যেখানে কথা বলা ব্যতীত লেখার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। এই লেখার জন্য ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন কি-বোর্ড। কিন্তু কিছুদিন আগে বিজয় কি-বোর্ড নিয়ে বিতর্ক আমাদের সবারই জানা।একটি স্বাধীন দেশে মানুষ তার মনের মধ্যে জমে থাকা কথা লেখনির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার জন্য কোন কি-বোর্ড ব্যবহার করবে তা সম্পূর্ণ ব্যক্তির নিজস্ব এখতিয়ার।নিজের দেশ,নিজের সংস্কৃতি, নিজস্ব সত্তা সবকিছু বাংলা ভাষার সাথে আপন আঙিনায় মিশে আছে তাহলে কেনো থাকবে এই কি-বোর্ড বিতর্ক? বাংলা ভাষাকে বিতর্কমুক্ত রেখে যথাযথ মর্যাদায় প্রকাশিত হোক বাংলা ভাষাভাষীদের মনের আবেগ, অনুভূতি, আর্তনাদ। বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে পড়ুক বাংলা ভাষার সৌন্দর্য।

ভাষার অপব্যবহার বন্ধ হোক একুশের মূল চেতনা
হুমায়ুন কবীর
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ভাষা একটি জাতির পরিচয় বহন করে। ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভাষার সঠিক ব্যবহারে ভাষা হয়ে ওঠে অর্থবহ। বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে, বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের আত্মদানে সিক্ত আমাদের এই ভাষা। তাই একুশ শব্দটি শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়, এটি বাঙালির আত্মত্যাগের উদাহরণ।বর্তমানে বাংলা ভাষাভাষী অধিকাংশ তরুণ-তরুণী বাংলায় কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। যতটুকু বলে তাও নিতান্তই প্রয়োজনের তাগিদে। বর্তমানে তরুণদের কাছে বহুল ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো ফেসবুক। এখানে আমারা বাংলা ভাষাটাকে একরকম হত্যা করে ফেলেছি। এখানে কথা বলার সময় আমরা ব্যবহার করি তথাকথিত ”বাংলিশ ভাষা”। যার মাধ্যমে বাংলা ভাষা বিকৃত হচ্ছে। এসব অপব্যবহার শীঘ্রই বন্ধ হওয়া উচিত। পরিশেষে আমার একটাই চাওয়া রঙিন পৃথিবীতে আমার সাদা-কালো বাংলা ভাষাটাও রঙিন হয়ে উঠুক যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে।

ভাষাকে ভালোবেসে নিজের সসংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে
রহিমা প্রামানিক লিজা
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি জাতির সঠিক বিকাশ মাতৃভাষা ব্যতীত সম্ভব না। মাতৃভাষার সাথে জড়িয়ে থাকে একজন ব্যক্তির ভাব, ভালোবাসা ও আবেগ। মাতৃভাষার মাধ্যমেই কেবল একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শেকড়ের সন্ধান করা সম্ভব। বাঙালী জাতির মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষা বাংলার সম্মান রক্ষার্থে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) রোজ বৃহস্পতিবার রাজপথে আত্নবিসর্জন দেন এ ভূখন্ডের সাহসী যুবকেরা। ঐতিহাসিক এদিনে প্রাণ দেয় রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বারসহ আরও অনেকে। বাঙালীই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। তাই ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য গর্বের। আত্নবিসর্জনের মাধ্যমে যে ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন শুরু হয়েছিলো তরুণ প্রজন্মের উচিত সেই ভাষাকে ভালোবেসে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করা।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।