‘নারীসত্তার অন্বেষণে’ বইটি নিয়ে আমার প্রথম ব্যক্তিগত আগ্রহ জন্মায় খোদ বইটির নাম থেকে। এরপর বইটি পড়তে গিয়ে ক্রমশ আগ্রহ আরও বেড়ে যায় কারণ বইটিতে খুব চমৎকার উপায়ে নারীসত্তার নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
‘নারীসত্তার অন্বেষণে’ বইটির লেখক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা- সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি এই বইটিতে ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত নারীর সত্তা নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের প্রক্রিয়াটি তুলে ধরেছেন।
ড. স্নিগ্ধার রচিত এই বইটি মূলত একটি এথনোগ্রাফিমূলক বই। তিনি ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত নারীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে, তাদের সাথে সামগ্রিক যোগাযোগ স্থাপন, এমনকি সহাবস্থান করে তাদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো নিজের এই গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী লেখার মাধ্যমে সকলের সামনে তুলে এনেছেন।
বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে নারীর অভিভাবক আসলে কারা? আদৌ কি নারীর অভিভাবক এর প্রয়োজন আছে কিনা? তার দায়িত্ব কেন শুধু পুরুষেরই? নারীরা কি নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব নিতে পারে না, নাকি পারছে না, নাকি নিতে দেয়া হচ্ছে না? নারীর সত্তা, বাস্তবিক পরিচয় এর কথা তুলতে গিয়ে ড. স্নিগ্ধা নারীর শরীর, মাতৃত্ব, যৌনতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কগুলো যেসসব উপায়ে নারীর সত্তা নির্মাণকে প্রভাবিত করে সেসব বিষয়গুলোই নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন।
এছাড়াও বইটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মেথডলজির অংশটুকু যার মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে একজন শিক্ষার্থীর- এধরণের গবেষণার জন্য একজন গবেষককে ঠিক কী কী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেসব প্রক্রিয়ায় গবেষণা পরিচালনা করলে তার কেন্দ্রে পৌঁছাতে সুবিধা হবে সেসব বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে বইটিতে- যা শিক্ষার্থীদের জন্য বইটিকে করে তুলেছে অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজ যতই প্রযুক্তিগত বা শিক্ষাগত দিক দিয়ে অগ্রসর হোক না কেনো সমাজে নারীর অবস্থান, মর্যাদা কিন্তু সেভাবে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হচ্ছে না। কিছুক্ষেত্রে এর একটি বড় বাঁধা হিসেবে খোদ নারী নিজেরাও দায়ী। বইটি পড়লে এর যৌক্তিকতা সম্পর্কে বুঝতে পারা যায়, যেটি বইটিতে বেশ কয়েকজন নারীর বক্তব্য ও গল্পের মাধ্যমেই উঠে এসেছে। বইটি পড়ার মাধ্যমে নারীদের করুণ বাস্তবতার জন্য শুধুমাত্র সমাজই নয় বরং পরিবারগুলোও যে দায়ী সে সম্পর্কে আমার ধারণা ও জানাশোনায় নতুন পরিসর যুক্ত হয়েছে।
সর্বোপরি, নির্বিশেষে একজন মানুষ হিসেবে আমাদের সকলেরই উচিত শুধুমাত্র লিঙ্গীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে না ভেবে সকলকে ‘মানুষ’ হিসেবে গণ্য করা এবং সমপরিচয়ে বা সমমর্যাদায় প্রত্যেককে আত্মপরিচয়ে বাঁচতে উদ্বুদ্ধ করা এবং সহযোগিতা করা। তাহলেই দেখা যাবে সমাজ বৈষম্যহীনভাবে সম্প্রীতির মাধ্যমে গড়ে উঠছে – যেটা আমাদের সকলেরই কাম্য।
লেখক: নাফিসা তাবাসসুম লিপ্ত , শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন
বুক রিভিউ: ইন্দুবালা ভাতের হোটেল