amadermuktokantho
চট্টগ্রামবুধবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান

এম রাসেল সরকার::
এপ্রিল ২৬, ২০২৩ ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। গত সাত বছর ধরে নদীর যত্রতত্র বালু উত্তোলন করলেও সরকারকে রাজস্ব দেননি। এবার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা জমা দেওয়ার আবেদন করেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডুবোচর খননের জন্য আদালত তাকে নির্দিষ্ট একটি মৌজায় বালু উত্তোলনের আদেশ দিলেও তা বিক্রির অনুমতি দেননি। তবু এত বছর ধরে বালু বিক্রি করছেন। এছাড়া কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিলেও কিছু বিধিনিষেধ থাকে। এক্ষেত্রে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে বেড়েছে নদী ভাঙন। সেই সঙ্গে ইলিশসহ মৎস্যসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

এ অবস্থায় বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। তবে অবৈধ বালু ব্যবসা অব্যাহত রাখতে তদবির করে যাচ্ছে সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক চেয়ারম্যান সেলিম খান। সবশেষ বালু উত্তোলন বৈধ করতে সরকারি রয়্যালিটি, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা জমা দেওয়ার আবেদন করেছেন।

যদিও সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর বলছে, আদালতের যে আদেশে চেয়ারম্যান সেলিম খান বালু উত্তোলন করছেন, সেখানে তাকে বালু বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবু তিনি বছরের পর বছর বিপুল পরিমাণ বালু বিক্রি করেছেন। এখন তিনি অন্য এক ব্যক্তির মামলায় আদালতের আদেশ দেখিয়ে এখন টাকা জমা দিতে চাইছেন। যা আদালত অবমাননার শামিল ও আইনের লঙ্ঘন।

সরকারি সম্পদ রক্ষায় জেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে টাকা জমাদানের আবেদন করেন সেলিম খান। ওই আবেদন সূত্রে জানা গেছে, সেলিম খান বালু উত্তোলনে সরকারি রয়্যালিটি, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নয় কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা জমাদানের আবেদন করেছেন। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে আরও চার কোটি ৫৭ লাখ টাকা জমা দেওয়ার আবেদন করেছেন।

জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া সেলিম খান আবেদনে উল্লেখ করেন, হাইকোর্ট বিভাগের ৫০৭৮/২০১৪ নম্বর রিট পিটিশন মামলায় ২০১৪ সালের ১০ জুন দেওয়া আদেশে প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলনের জন্য রয়্যালিটি বাবদ সরকারি রাজস্ব খাতে জেলা প্রশাসক বরাবর ২৫ পয়সা হারে এবং বিআইডব্লিউটিএ বরাবর ১৫ পয়সা হারে রয়্যালিটি জমাদানের নির্দেশনা রয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ২০১৯ সালের ২০ মার্চ ৩০ কোটি ৮৪ লাখ ঘনফুট উত্তোলনের কার্যাদেশ দিলেও রয়্যালিটি, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ টাকা জমাদানের জন্য চিঠি দেওয়া হয়নি। তাই আদালতের আদেশ অনুসরণ করে ৩০ কোটি ৮৪ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের সরকারি রয়্যালিটি বাবদ জেলা প্রশাসক বরাবর ২৫ পয়সা হারে সাত কোটি ৬২ লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা, ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ এক কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৭৫ টাকা এবং ৫ শতাংশ আয়কর বাবদ ১০ হাজার ১২৫ টাকাসহ নয় কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার সরকারের রাজস্ব খাতে জমাদানের আবেদন করছি।

এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিষয়ে জবাব চেয়ে সেলিম খানকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭৫৪৫/২০১৫ রিট পিটিশনের ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিলের আদেশে হাইকোর্ট আপনাকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিলেও বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন কিনা তা উল্লেখ করেননি। আদালত কিংবা ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএসহ কোনও সরকারি সংস্থা বালু বিক্রির অনুমতি না দিলেও কীভাবে সরকারি বালু বিক্রি করে অসাধুভাবে লাভবান হচ্ছেন, তার উত্তর জানা প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসকের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১-এর ১০ (৫) বিধিতে বলা হয়েছে, কার্যাদেশে ইজারাগ্রহীতা কর্তৃক পরিশোধিতব্য সমুদয় মূল্য উল্লেখ থাকবে। ইজারাগ্রহীতাকে কার্যাদেশ প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে ওই সমুদয় অর্থ (ভ্যাট, আয়কর এবং সরকার নির্ধারিত অন্যান্য করসহ) জমা দিতে হবে। আপনার আবেদনে উল্লেখ আছে, জেলা প্রশাসক ২০১৯ সালের ২০ মার্চ উল্লেখিত মৌজায় ৮৬.৩০ লাখ ঘনমিটার বালু উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআইডব্লিউটিএ বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। ওই পত্রের সাত কার্যদিবস গিয়ে তিন বছর ১১ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আপনি রয়্যালিটি জমা দিতে চাচ্ছেন।

পদ্মা-মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলনে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় এলাকাবাসীর দাবি এই ভূমিদস্যু সেলিম খানকে থামানো না গেলে পদ্মা-মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন বন্ধ করা সম্ভব না।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।