শিকড় আমাদের অস্তিত্বের মূল, আমাদের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের ভিত্তি। বাপ-দাদার আদর্শ এবং অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনের পথচলায় আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। তবে, সময়ের সঙ্গে প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনকে বোঝা এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
আজকের প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বেড়ে উঠেছে। তারা কোনো একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে শত শত নিবন্ধ পড়ে, তথ্য বিশ্লেষণ করে, AI’কে কাজে লাগিয়ে পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সহস্র তথ্য উপাত্তকে বিশ্লেষণ করে এবং গবেষণার মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করে। এটি বোঝা জরুরি যে, তারা কেবলমাত্র আবেগ বা প্রথাগত ধারণার ওপর নির্ভরশীল নয়। তাদের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত যুক্তিনির্ভর এবং গবেষণার শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ানো।
কিন্তু আমরা কি সিনিয়র হিসেবে তাদের এই প্রচেষ্টাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করি? অনেক ক্ষেত্রে, সিনিয়রদের মধ্যে একটি অতিরিক্ত ইগো বা প্রাচীন ধারণা কাজ করে, যা প্রজন্মের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। কথায় কথায় শিকড়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, প্রজন্মকে ‘বাপ-দাদার শিক্ষা ভুলে গেছে’ বলে সমালোচনা করা তাদের মনোবল ভাঙতে পারে। আজকের প্রজন্ম বহুগুনে স্মার্ট; এটা মেনে নিতেই হবে।
শিকড় কখনো অস্বীকার করা যায় না। সময়ের প্রয়োজনে শিকড়ের সন্ধান সবাই করে, কারণ শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক কেবল ঐতিহ্যের নয়, আত্মপরিচয়েরও। তবে নতুন প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনার স্বাধীনতাকে হেয় করার মানে হলো তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে দমিয়ে দেওয়া।
সিনিয়রদের উচিত নতুন প্রজন্মের প্রতি শ্রবণশীল হওয়া। তাদের মতামত ও চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে তাদের মেন্টর হিসেবে পাশে দাঁড়ানো। মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট নয়, বরং গঠনমূলক পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের দক্ষতাকে বিকশিত করতে সাহায্য করা প্রয়োজন।
সিনিয়রদের মনে রাখতে হবে, পরিবর্তনকে গ্রহণ করাই আধুনিক কর্মক্ষেত্রের বাস্তবতা। একদিকে শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, অন্যদিকে প্রজন্মের দক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে কর্পোরেট জগতের অগ্রগতির চাবিকাঠি।
আমাদের শিকড়ের প্রয়োজনীয়তা অটুট। তবে শিকড়ের নামে প্রজন্মকে দমন না করে, বরং তাদের সঙ্গে সমঝোতা এবং সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। সম্মিলিতভাবে শিকড়ের শক্তি এবং প্রজন্মের উদ্ভাবনী ক্ষমতা একত্রিত করলে আমরা নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যৎকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারব।
প্রজন্ম বদলেছে, তবে শিকড় অমলিন। একসঙ্গে কাজ করলেই তৈরি হবে একটি শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ।