দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আষাঢ়ের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদায় কাঙ্ক্ষিত ডিম ছেড়েছে মা মাছ। গত রবিবার রাত থেকে হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের মাঝে বইছে ঈদ উৎসবের আমেজ।
এই মৌসুমে মা মাছ ডিমের নমুনা দিলেো তবে একবারে মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে মা মাছ গত রবিবার ডিম ছাড়ে।মৌসমের এই প্রথম ডিম দেওয়ায় মা মাছ বিপুল ডিম ছাড়ে।সোমবার সকালে মা মাছে ডিম দিলেও সংগ্রহকারীদের রাখার পর্যপ্ত খোয়া বা সরকারী বেসরকারী হেচারী না থাকায় বহু ডিম নদীতে ফেল দেয়।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হ্যাচারী মাছুয়াঘোনায় ৫০ টি কুয়ায় চল্লিশ কেজি করে ২ হাজার, শাহমাদারিতে ৪৫ টি কুয়ায় ১ হাজার ৮শ, মদুনাঘাটে ৩০ টি কুয়ায় ১ হাজার ২ শ কেজি ডিম সংরক্ষণ করা হয়। একইসাথে রাউজান উপজেলার মোবারকখীল হ্যাচারীতে ১৬ কুয়ায় ১ হাজার ১৭০ কেজি ডিম সংরক্ষণ করা হয় রেণু উৎপাদনের।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম বলেন, গত রবিবার সকাল থেকে জোয়ার ভাটার সময় দফায় দফায় মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে সবর্শেষ রবি রাত ১১টা দিকে পুরোদমে ডিম ছেড়ে দেয়।
নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে যথেষ্ট ডিম সংগ্রহ করেছেন ডিমসংগ্রহকারীরা। এবার ভাল ডিম ছেড়েছে মা মাছ। তবে পরিমাণটা আমরা এখন বলতে পারছি না। সবগুলো হিসাব করে জানানো হবে।
হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার মধ্যরাতে জোয়ারের সময় নদীর আমতুয়া পয়েন্টে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে এরপর এই ডিম জোয়ার বাড়ার সাথে সাথে নাপিতের ঘাট, আজিমারঘাট, মাছুয়াঘোনা হ্যাচারী সংলগ্ন পুরা কোপালী স্লুইজ গেইট, নোয়াহাট সহ হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে এই ডিম ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, রোববার সকালে অমাবস্যা শেষ হওয়ায় রাতের জোয়ারে ডিম ছাড়ার শতভাগ সম্ভাবনা ছিল। তাই হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, জাল, বালতিসহ ডিম ধরার প্রয়োজনীয় সরন্জাম নিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। এই মৌসুমে হালদা নদী থেকে প্রচুর পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে ডিমসংগ্রহকারী সহ হালদা সংশ্লিষ্ট সবার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে।
এর আগে শনিবারের বজ্রপাতসহ ব্যাপক বৃষ্টির প্রভাবে হালদায় পাহাড়ি ঢল নেমে এসে ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয় বলে জানান এই হালদা গবেষক।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, সোমবার সকাল পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করে নিজস্ব হ্যাচারিতে নিয়ে যায় ডিম সংগ্রহকারীরা। সেখানে ১৮ ঘণ্টা পর ডিম থেকে রেনু হবে। ওরা তিনদিন ধরে রেনুগুলোকে নার্সিং করবে। এরপর পোনায় পরিণত হবে সেগুলো। অর্থাৎ সংগ্রহের ৯৬ ঘন্টা পর মা মাছের ডিম বিক্রয়যোগ্য পোনায় পরিণত হবে।
এর আগে চলতি বছরের ১৭ মে এবং রোববার সকালে হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে প্রবল পাহাড়ি ঢল ও শীতল আবহাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। নমুনা ডিম মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য প্রস্তুতির আভাস। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে।
মাছুয়াঘোনা হ্যাচারীর ডিম সংগ্রহকারী মো:শফিউল আলম জানান,এই মৌসুমে মা মাছ একদফা এবং শেষ প্রান্তে এসে যথেষ্ট পরিমান ডিম ছেড়েছে এই ডিম আমরা হেচারীতে রাখার অভাবে অনেক ডবম ফেলে দেওয়া হয়েছে।তার পাঁচটি ডিম ধরার নৌকায় ১৫জন ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ করেছে।অপরদিকে নয়াহাট এলাকার প্রবীন ডিম সংগ্রহকারী মো:কামাল সওদাগর জানান,তার তিনটি নৌকায় ৯জন ডিম সংগ্রহকারী নিয়ে ডিম সংগ্রহ করেছে। তবে কি পরিমান ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে তা এখনো অবগত নয়।
এ নিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা-ফারহানা লাভলি জানান,এবার হালদার ৩শত ডিম সংগ্রহকারী আনুমানিক কযেকশত নৌকা নিয়ে হালদানদীতে ডিম সংগ্রহ করতে দেখা যায়।তিনি আরো জানান এবার কযেক বছরের তুলনায় খুব বেশী পরিমান ডিম দিয়েছে হালদার মা মাছেরা।