সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার ও আদালত কর্তৃক ২০১৮ সালে জারিকৃত পরিপত্র বাতিলের প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। গত দুইদিন পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একাই আন্দোলন করলেও এবার তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩ জুলাই) বেলা আড়াইটার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠাল তলার সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মূল ফটক হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে রায়সাহেব বাজার মোড়ঘুরে তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন।
এসময় আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের দাবি, ২০১৮ সালের কোটার পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডে কোটা প্রয়োগের আমূল সংস্কার করতে হবে। এছাড়া একই কোটা বারবার প্রয়োগের বিষয়টি বাতিল করতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর যে দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কর্মহীন, সেখানে এই ধরণের কোটা প্রথা রীতিমতো বৈষম্য। কোটা প্রথার কবর না দেয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে এসময় হুশিয়ারি দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কোটা প্রথা নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। কেউ কেউ বুকে পিঠে কোটার মুক্তি চেয়ে স্লোগান লিখে আন্দোলন করছেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের ‘নো কোটা, নো ডিসক্রিমিনেশন’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সবার জন্য সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, পোস্টার প্রদর্শন করে কোটা বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়।
পূর্বের ন্যায় আজও আন্দোলনকারীরা ৪ দফা দাবি উল্লেখ করেন। দাবিগুলো হলো: ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।