বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের ভর্তি ফি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধার্যকৃত ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ২৬,৭২৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২১,৭২৫ টা। বিশাল অংকের এই ফি দিয়ে ভর্তি হতে হিমশিম খাচ্ছে ভর্তিচ্ছু নবীন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগষ্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সৈয়দ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত ভর্তি ফি প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে থাকা ভর্তি ফি গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬,৭২৫ টাকা ধরা হয়েছে সিএসই, ইইই, ফিশারিজ ও ভূতত্ত্ব বিভাগের জন্য। গনিত ও সমাজকর্ম বিভাগে ধার্য করা হয়েছে ২৩,৭২৫ টাকা ও ২৪,৭২৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২১,৭২৫ টাকা ধার্য করা হয়েছে ব্যবস্থাপনা বিভাগে।
একই শিক্ষাবর্ষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি দেখে নেওয়াক যাক:
বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সম-সময়ে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ১৩,১৭০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১২,৪৪৫ টাকা, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ২০,৫০০ এবং সর্বনিম্ন ১৭,৫০০ টাকা ও রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ১৮,০৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৬,৮১০ টাকা।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত সাধারণ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ১২,৪০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০,৪০০ টাকা, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ১৭,০৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৬,৪৩৫ টাকা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ১৪,২০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৩,৭০০ টাকা।
নতুন প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ৭,৫০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৬,৫০০ টাকা।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি ফির যখন এই চিত্র সেখানে সবাইকে ছাড়িয়ে ভর্তি ফি ধার্যে শীর্ষে রয়েছে বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে বাংলাদেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬,৭২৫ টাকা ভর্তি ফি নেই। এটিই দেশের সর্বোচ্চ।
বিষয়টি নিয়ে ভর্তি হতে আসা নতুন শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে তীব্র সমালোচনা। কমার বদলে বেড়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ এখনে ভর্তি হতে প্রয়োজন হতো সর্বনিম্ন ১৭,২৫০ টাকা তা এখন ৪,৪২৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ২১,৭২৫ টাকা এবং যা সর্বোচ্চ ছিলো ২৫,৭৫০ টাকা তা এখন ৯৭৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৬,৭২৫ টাকা।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে আসা মোঃ ফিরোজ হোসেন বলেন “দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আসে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। এখন সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি আমাদের অভিভাবকদের আয়। এ অবস্থায় এতো টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া অসম্ভব প্রায়। হাজার সমস্যার মাঝেও কষ্টের লেখা পড়া করেছি যেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। এটর মূল উদ্দ্যশই ছিল, যাতে সেখানে গিয়ে অল্প খরচে ভলো মানের উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে পারি কিন্তু এখানে যে ভর্তি ফি দেখছি তা দেওয়া আমাদের অনকের পক্ষেই প্রায় অসম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভর্তি হতে আসা এক নবীন শিক্ষার্থী বলেন “একই দেশে লেখাপড়া করি । আমর অন্য ব্ন্ধুরা অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে আর এখানে আমার লাগছে ২৬ হাজারেরও বেশি। আমাকে অনেকেই বলেছে এটা কি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নাকি যে এতো টা ভর্তি ফি? আমার অনেক বন্ধুকে দেখেছি যার বাবা/মা নেই টাকা জোগার করতে পাছে না আবার অনেকেই ধার-দেনা বা অন্যর সাহায়্য সহযোগীতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে আবার কারো ভাগ্যে সে সুযোগও জুটছে না। তাই আমাদের চাওয়া ভর্তি ফি কমানো হোক।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বলেন “অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে এটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে অনেক মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকেই আমরা বঞ্চিত। সেখনে যদি শুনতে হয় ভর্তি ফি ধার্যে শীর্ষে রয়েছে বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে বিষয়টা একই সাথে দুঃখজনক এবং হাস্যকর। আমরা সাধারন শিক্ষার্থীরা চাই এই ভর্তি ফি হ্রাস করে প্রকৃতি পক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তার উপর ভিত্তি করে সর্বনিম্ন একটা ভর্তি ফি যেন নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সৈয়দ ফারুক হোসেনের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান ‘ভর্তি ফি আমরা জিএসটির নিয়ম অনুসারে করেছি। আমাদের এটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় কোন ভর্তুকি নেই। ডিপিপি পাস হয়নি, পাস হওয়ার পর সরকার যখন আমাদের সর্বোচ্চ বাজেট দিবে তখন কমাতে পারবো।
এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের তুলনা দিয়ে বলেন সেখানে বাজেট হয় ৬শত কোটি টাকা, অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কম করে হলেও ৫০ কোটি টাকা দেয় আর আমাদের দেয় মাত্র ১৮ কোটি টাকা। আমরা এই টাকা দিয়ে কিভাবে চালাবো?
ভর্তি ফি কমার কোন সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এখন সম্ভব না আমাদের বাজেট বৃদ্ধি হলে তখন চেষ্টা করব।’
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুল আলম খানকে ফোন করা হলে প্রথমে জানান মিটিংয়ে আছি পরে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
