amadermuktokantho
চট্টগ্রামশনিবার , ২২ অক্টোবর ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সারভাইভারশিপ বায়াসঃ অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়াদের কথা

আবদুল্লাহ আল নোমান
অক্টোবর ২২, ২০২২ ১০:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কিছুদিন আগের ঘটনা। ক্লাস করার টাইমে কুরিয়ার অফিস থেকে ফোন আসলো সপ্তাহখানেক আগে আমার অর্ডার করা বইগুলো তাদের অফিস থেকে গিয়ে রিসিভ করার জন্য।

ক্লাস শেষে বিকেল বেলা ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরত আসার সময় বইগুলো সাথে করে নিয়ে আসলাম। বাসায় এসে দেখি বড় মামা এবং সেজো মামা পরিবার সমেত বেড়াতে এসেছেন। তো আমি বইগুলো টেবিলে রাখার পর মামা একটা বই হাতে নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে বললেন এগুলো কোনো বই হলো বই তো আমাদের সময় লিখতেন হুমায়ূন আহমেদের মত লেখকেরা। তখন আবার হঠাৎ বড় মামা পেছন থেকে বলে উঠলেন এগুলাও কোনো লিখাই না। লিখা ছিল রবীন্দ্র-নজরুলদের।

তখন আমি ভাবলাম ব্যাপারটা কি আসলেই এই রকম?? উত্তরটা হবে না.. এখন আমরা পুরনো দিনের সেই লেখকের বইগুলিই পড়ি যারা যুগের পরিবর্তনেও টিকে আছেন। তেমনি পরবর্তীতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও বর্তমান সময়ের লেখকদের মধ্যে তাদেরকেই চিনবে যারা কালের ছাকনিতে টিকে থাকবে।
এখন যদি বর্তমানে দেশের সবথেকে জনপ্রিয় বিষয় ক্রিকেটের দিকেই আমরা তাকাই দেখা যাবে সবাই কিন্তু সাকিব-মাশরাফিই হতে চায়। কিন্তু এটা কি চাইলেই সম্ভব?? খোজ নিলে দেখা যাবে, এই এক সাকিবের পেছনে এমন শখানেক খেলোয়ার আছেন যাদের কখনো জাতীয় দলে চান্সই হবে না। লিগ ম্যাচ পর্যন্তই তারা সীমাবদ্ধ। আবার সেই জাতীয় দলের আশায় বসে থাকা খেলোয়াড়টার পেছনে আরো ১০০জন খেলোয়াড় বসে আছেন যারা লিগ ম্যাচ পর্যন্তও যেতে পারবে না। দিনশেষে দেখা যাবে তারা ক্লাবে ক্লাবে প্র্যাকটিস করে কিংবা এ পাড়ায় ও পাড়ায় খ্যাপ খেলে বেড়াবে৷ আবার এদের পেছনে এমন আরও শখানেক আছেন যারা স্বপ্ন দেখে একদিন ক্রিকেট খেলার।
আবার ধরেন দেশের সব জায়গায় জেমসের জনপ্রিয়তা দেখে কেউ একজন ভাবলো যে সেও জেমস এর মতো হবে। সব ফেলে দিয়ে লেগে গেলো গায়ক হওয়ার জন্যে। কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে এতটাই সহজ?? দিনশেষে দেখা যাবে এরা পাড়া-মহল্লার কোনো প্রোগ্রামে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গান গেয়ে বেড়াচ্ছে। এই যে সাকিব-জেমসের পিছনের এই দলটা অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে এদের সম্পর্কে কিন্তু আমরা জানতে পারি না। এরাই সারভাইভারশিপ বায়াসের শিকার।
এখন এই যে এত বড় দলটা এতজনের পিছনে থেকে ভাবছে যে খেলোয়ার হওয়া তো খুব সহজ। কিন্তু সফল খেলোয়াড় হওয়াটা যে কতটা কঠিন ‌সে বিষয়টাকেই গুরুত্বই দিচ্ছে না।
এই গুরুত্ব না দেওয়াটা কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত জীবনেও করি। আমার কথাই ধরুন আমি খুবই কর্মঠ ইতিবাচক আর আশাবাদী একজন মানুষ। সবার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে রেস্টুরেন্টের ব্যাবসা করব। নামও ঠিক করলাম হাতান’স ক্যাফে। মনে মনে ভাবলাম এটাই হবে ভবিষ্যতের স্টারবাকস কিংবা কেএফসি। সবাই আমাদের এখানে খাওয়ার জন্যে দূর-দূরান্ত থেকে আসবে। চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে আমাদের ব্রাঞ্চ।
এখন আসি বাস্তবতায়। কত পার্সেন্ট সম্ভাবনা আছে যে এটাই হবে পরবর্তী কেএফসি? নেই বললেই চলে। সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা হচ্ছে আমরা যাত্রাই শুরু করতে পারব না। ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া, জায়গা ভাড়া নেয়া, উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ দেওয়া ইত্যাদি ঝামেলা করতে করতেই হতাশ হয়ে হয়তো নিজেকে গুটিয়ে নেবো। এরকম বহু উদাহরণ আছে। আবার এই ধাপে উৎরে গেলে পরের দৃশ্য হচ্ছে, বছর দুয়েকের মধ্যে লস খেয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়বো। যদি টিকেও যাই আর বড় হতে পারব না। একজন বাবুর্চির আর ৬টা টেবিলের ছোট্ট একটা ক্যাফেতেই আটকা পড়ে যাবো। আর উন্নতি হবে না। তার মানে কি এই যে কখনো ঝুঁকি নেবো না? তা নয়। আমার মতো নতুনদের শুধু এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আমরা আমাদের চারপাশে যে পরিমাণ সফল উদ্যোক্তা দেখি, শতকরায় হিসাব করলে তা খুবই নগণ্য।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে ব্যার্থদের আমরা কেন দেখি না? কারণ, ব্যার্থরা সফলদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বক্তব্য দিতে আসে না। কোনো সাংবাদিক তাদের সাক্ষাৎকার নিতে যায় না। কোনো পত্রিকায় তাদের পাওয়া যায় না। তাই আমরা জানি না। সফল হওয়া মানুষগুলো ভাগ্যের জেরে চান্স পেয়ে এবং আশেপাশের অন্য সফলদের সাথে নিজেদের মিলগুলো খুঁজে পেয়ে যখন বলে তারা পরিশ্রম আর মেধার জোরে চান্স পেয়েছে তখনই সারভাইভারশিপ বায়াস বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। কারণ আরেকটু খোজ নিয়ে ব্যার্থদের ভিড়ে মিশে গেলে দেখা যাবে সেখানেও এরকম অনেক পরিশ্রমী আর মেধাবী ছিলো।
এই যে আমরা চারপাশের হরদম সফল মানুষদের দেখে আমরা নিজেদের সাফল্যের সম্ভাবনাকেও অতিরিক্ত গুরুত্ব দিই এটাই সারভাইভারশিপ বায়াস এর মূলকথা। এই বায়াস থেকে দূরে থাকার উপায় একটাই। সফল মানুষদের গল্প শোনার পাশাপাশি ব্যর্থ মানুষদের গল্পও শোনা। শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে, কিন্তু আমাদের চিন্তাভাবনা অনেক পরিষ্কার হবে।

লেখক: আবদুল্লাহ আল নোমান

শিক্ষার্থী: জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।