amadermuktokantho
চট্টগ্রামরবিবার , ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আত্মহত্যা ও এর ঔষধ

একেএম আব্দুল্লাহ
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ ২:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সুখ দুঃখ দুই মিলিয়েই মানুষ । সুখগুলো প্রকাশ করতে পারে উন্মুক্তভাবে, অন্যরা সহজেই গ্রহণ করে নেয় । তবে দু:খটা সবাই গ্রহণ করতে পারে না । ফলে ব্যক্তির মন ভারাক্রান্ত হয়, দিশেহারা হয়ে হতে থাকে । যখন গ্লানির পাত্র পূর্ণ হয়ে যায়, কষ্টে জর্জরিত, তখনই তার সামনে বিকল্প পথ হিসেবে চলে আসে আত্মহত্যা ।

সবাই পৃথিবীতে বাচতে চায়, হাসতে চায় । কাউকে যদি বলা হয়, আপনার জীবনের সর্বোচ্চ চাওয়া কি ?  হাসিমুখে উত্তর আসবে, আমি শান্তিতে বাচতে চাই । তবে কেনইবা স্বেচ্ছায় মৃত্যুর মতো কঠিন পথকে বেছে নেয় ?

আত্মহত্যার কারণ: পৃথিবীর প্রতিটি কাজের পিছনে যুক্তি রয়েছে, তেমনি আত্মহত্যার পিছনেও কিছু কারণ আছে । কেউই সজ্ঞানে আত্মহত্যার মতো কঠিন পথকে বেছে নিবে না । সবাই দুশ্চিন্তা, কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্ত করতে বাধ্য হয় ।

পারিবারিক অশান্তি:
কিছু পরিবারে বাবা-মা উভয়েই ব্যস্ত থাকায় ছোটবেলা থেকে অন্যের কাছে বড় হতে থাকে । সকল সন্তানের একান্ত চাওয়া থাকে, পিতামাতার সাথে তার শৈশব কৈশোর সুন্দরভাবে কাটুক ।  কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না । ছোটবেলা থেকেই তার মনের সুখ দু:খ কষ্ট শেয়ার করতে পারে না । পিতামাতার থেকে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয় । আস্তে আস্তে তা ভয়ংকর রুপ নিতে থাকে । যখন পড়াশোনার গন্ডি পেরিয়ে চাকরিজীবনেও সমস্যায় পড়ে কাউকে বলতে পারে না, তখন তার মানসিক চাপ বেড়ে যায়, খাবারে অনীহা, মেজাজ বিগড়ে যাওয়া সহ কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ভুগতে থাকে । জীবনের সকল আশা হারিয়ে ফেলে । একটা সময় ঝুকে পড়ে আত্মহত্যায় ।

বেকারত্ব:
পড়াশোনা শেষ, এবার চাকরি করার পালা । ভালো ফলাফলের সিজির সার্টিফিকেট নিয়ে ফাইল গুছিয়ে ভাইভা বোর্ডে যখন ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরেও শুনে ব্যর্থ, একটু হতাশ হয়ে যায় । বারবার পরীক্ষা দিয়েও ব্যর্থ, অত:পর শুনতে হয় নানান কথা । পাশের বাড়ির আন্টি এসে হাসি তামাশা করতে থাকে, একটা সময় বাবা-মাও মুখ ফিরিয়ে নেয় । নানান ঠাট্টা-তামাশায় নিজেকে ব্যর্থ মনে হয় । কারোবা গল্পটা একটু ভিন্ন । গ্রামে বয়স্ক বাবা-মাকে ফেলে শহরে এসেছে চাকরির খোজে, আশা ভালো চাকরি পেয়ে বাবা-মাকে নিয়ে আসবে, সেবা করবে । কিন্তু একের পর এক ব্যর্থ হয়ে ক্লান্ত শরীরে যখন বাসায় আসে, তখন একটা ফোন আসে, অসুস্থ গলায় কুশল জানতে চায় মা, হয়তো বলে ছোটভাইয়ের বিভিন্ন প্রয়োজন কিংবা আবদারের কথা । বড়ছেলের কাছে অনেক চাওয়া থাকে পরিবারের, যখন আশাগুলো পূরণ হয় না, নিজের কাছেই নিজে অপরাধী হয় ।
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আর সংবরণ করতে পারে না নিজেকে । আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ।

বন্ধুত্ব-ভালোবাসা:
মানুষ সামাজিক জীব । সমাজে সে একা বসবাস করতে পারে না । কারোর উপর তাকে নির্ভর হতে হয় । অনেকে এর সুযোগ নিয়ে থাকে । প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষের আকর্ষণ রয়েছে । কৈশোর বয়সে উপর্যুক্ত তত্বাবধানের অভাবে প্রেমে পড়ে কিশোর – কিশোরীরা । ধীরে ধীরে তা ভুল পথে এগোয় এবং পরবর্তীতে করে বসে মারাত্মক ভুল । যখন বুঝতে পারে, মান সম্মানের ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । অনেকের গল্প হয় উলটো । প্রেমের প্রস্তাবকে বা ইভটিজিংকে যখন না বলে, তার উপর নেমে আসে অত্যাচার, হয় এসিডের শিকার নয়তো ধর্ষণের শিকার । মানসম্মানের ভয়ে কেউবা সঠিক বিচারের অভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে । পাশের মানুষের হাসি-ঠাট্টা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । কেউবা ব্যবসায় লোকসান, বন্ধুত্বের ফাটল, বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি সহ্য করতে পারে না । ফলাফলস্বরুপ ঝরে যায় তাজা প্রাণ ।

কৌতূহল:
মানুষের কৌতুহল অনেক । নতুন কিছু দেখলেই তার প্রতি আকর্ষণ জন্মায় । কৌতুহল মেটাতে গিয়ে অনেকে ভুল পথে পা বাড়ায়, জড়িয়ে পড়ে মাদকদ্রব্যের নেশায় । দীর্ঘদিন মাদকদ্রব্য ব্যবহারে বিষণ্ণতা রোগ দেখা দেয় এবং পরিশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ।

যৌতুক:
যৌতুক সমস্যা বহু প্রাচীন একটি সমস্যা । এর ফলে বর্ণনাতীত অত্যাচার সহ্য করে আসছে গৃহবধুরা । যখন অত্যাচার সইতে সইতে বাচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ, এভাবে অকালে ঝরে যাচ্ছে বহু তাজা প্রাণ ।

এছাড়াও বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি ভয়াবহ রোগ দেখা দিয়েছে, ডিপ্রেশন । পড়ালেখায় ভালো ফলাফল না হওয়া, বিখ্যাত হতে না পারা, মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারা, চাকরি না পাওয়া, ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যাওয়া, নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারা সহ বিভিন্ন কারণে তরুণ-তরুণীরা ডিপ্রেশনে ভোগে । দীর্ঘদিন হতাশায় থাকতে থাকতে জীবনের সকল আশা হারিয়ে ফেলে । নিজেকে হতাশা থেকে মুক্ত রাখতে ঝুকে পড়ে আত্মহত্যায় । শেষ বয়সেও অনেকে সঙ্গীর অভাবে বেছে নেন আত্মহত্যার ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৭ লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিবছর আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ড সহ কয়েকটি উন্নত দেশে বৈধ করা হয়েছে আত্মহত্যা । এমনকি আবিষ্কৃত হয়েছে উন্নতমানের যন্ত্র যার মাধ্যমে বেদনাহীনভাবে  মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ।

করোনার সময় দেখা গিয়েছে, কিভাবে মানুষ বাচার জন্য হাহাকার করছে, একটু অক্সিজেনের জন্য পুরো সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে প্রস্তুত, এদিকে কেউবা স্বেচ্ছায় মৃত্যুর স্বাদ নিচ্ছে ।

আমাদের উচিত আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসা । আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় কারণ ডিপ্রেশন । আমরা চাইলেই আমাদের পাশে থাকা বন্ধু-বান্ধবী, পরিচিতজনের দু:খগুলো শুনে তাকে সাহায্য করতে পারি । আর্থিকভাবে না হোক, অন্তত তাকে ভালো পরামর্শ দিতে পারি । এতে বাচার জন্য নতুন অনুপ্রেরণা পাবে ।
যৌতুক, মাদকদ্রব্য সহ অবৈধ কাজগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । আর মোটকথা আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক পদক্ষেপও নিতে হবে । ছোটবেলা থেকেই শিখাতে হবে মূল্যবোধের চর্চা, পিতামাতারও উচিত ব্যস্ততার ফাকেও সন্তানকে উপযুক্ত সময় দেয়া । কিভাবে বন্ধুর সাথে ভালো আচরণ করতে হয়, কিভাবে একজন আদর্শ মানুষ হতে হয়, একটি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই গড়ে তুলতে হবে । তাকে মানবপ্রেম, দেশপ্রেম সহ সকল ভালোগুণ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে, তার সাথে মিশতে হবে । তার মেধাকে ভালোভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ ও ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে ।

” নিষিদ্ধ হোক আত্মহত্যা
এগিয়ে আসো একসনে
ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা
হাসুক সবাই প্রাণ খুলে ।”

লেখক: একেএম আব্দুল্লাহ
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।